বডি ফিটনেস বলতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাকে বোঝায়। একজন মানুষকে তখনই ফিট বলা যায় যখন তার শরীর ও মন সুস্থ থাকে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই মন ভালো থাকে। এ কারণে বলা হয় স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে সঠিকভাবে চলাফেরা করতে হয়। সঠিকভাবে চলাফেরা না করলে শরীর সুস্থ রাখা অসম্ভব। চলুন জেনে নিয় বডি ফিটনেস ঠিক রাখার উপায়।
বডি ফিটনেস ঠিক রাখতে হলে সঠিক নিয়মে চলাফেরা করতে হয়। কারণ, এমনি এমনি বডি ফিটনেস ঠিক থাকে না তার জন্য কিছু পরিশ্রম করতে হয়। এর সাথে শারীরিক যত্ন নিতে হয়।
হৃৎপিণ্ড বা হার্টের যত্ন:
মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে হৃদপিণ্ড। হৃদপিণ্ড ছাড়া কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। হৃদপিণ্ড বা হার্টের এর কাজ হচ্ছে রক্ত পরিষ্কার রাখা এবং সম্পূর্ণ শরীরে রক্ত সরবরাহ করা। হৃৎপিণ্ড যদি এক মিনিট কাজ করা বন্ধ করে সাথে সাথে মানুষ মারা যায়। এ কারণে, বডি ফিটনেস ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই হৃৎপিণ্ড বা হার্ট এর যত্ন নিতে হবে। হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এবং হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সেসব হচ্ছে, রঙিন ফল, শাকসবজি, যথেষ্ট পরিমাণ আর যুক্ত খাবার, সূর্যমুখী ফুলের তেল, ডাল এবং ডিমের হলুদ অংশ। এসব খাবার খেলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে।
কিডনির যত্ন:
কিডনি আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত বজ্র পদার্থ বের করে দেয়। কিডনি ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে কিডনির যত্ন নিতে হবে। কিডনির জন্য সবচেয়ে প্রতিভার হচ্ছে লবণ। তাই অতিরিক্ত লবণ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। সাধারণত কিডনির সমস্যা হয় ডায়াবেটিসের কারণে। ডায়াবেটিস রোগীদের ঘনঘন প্রস্রাব হয়। যার ফলে কিডনির উপর অনেক চাপ পড়ে। কিডনি সুস্থ রাখতে ফলমূল, শাকসবজি এবং ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা:
নিয়মিত ব্যায়াম বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। মাংসপেশী শক্তিশালী করে এবং অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে দেয়। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে ডায়াবেটিস কমায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক রাখে। হাড় মজবুত করে।
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম ছাড়া কোনভাবে বডি ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব না। ব্যায়াম করার কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সময় অনুযায়ী শরীরচর্চা না করলে অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। বয়স অনুপাতে শরীর চর্চার কিছু নিয়ম রয়েছে। যেকোনো বয়সে যে কোন ধর্মের ব্যায়াম করা ঠিক না। এর জন্য, ধরে চর্চার কোন কোর্স করতে পারেন। যার ফলে খুব সহজেই সঠিক ব্যায়াম করতে পারবেন।
নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে আর শরীর সুস্থ থাকলে আমাদের মন ভালো থাকে। মানসিকভাবে যদি সুস্থ থাকেন তাহলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে সহজে কোন ধরনের রোগ আক্রমণ করতে পারে না। এজন্য, বডি ফিটনেস রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
সঠিক খাবার খাওয়া:
খাবার আমাদের শরীরে শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। সারাদিন কাজ করার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। যদি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া হয় তাহলে আমাদের দেহের নতুন করে শক্তি উৎপন্ন হয়। খাদ্য আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। খাদ্য ছাড়া কোন জীবজন্ত বেঁচে থাকতে পারে না। এ কারণে শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হলে সঠিক খাবার খেতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের সকল অঙ্গ ঠিক রাখতে পারি। সকল অঙ্গ ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই খাবার খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় অবশ্যই শাকসবজি রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি খাওয়ার ফলে ফুসফুস, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, মুত্রাশয়, ডিম্বাশয় এর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত শাকসবজি ফলমূল খাওয়ার ফলে ওজন ঠিক থাকে। আর ওজন ঠিক থাকলেই আমাদের শরীর ফিট থাকে। সকল ধরনের রোগ জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মেডিটেশন করা:
মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে উপকারিতা পাওয়া যায়। নিয়মিত মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ কমায়। ছাড়াও ভালোভাবে সংযোগ স্থাপন এবং লক্ষ্য স্থির রাখতে সাহায্য করে। মানসিক ক্লান্তি দূর করে। শারীরিক ব্যথা দূর করে। শরীরের ভাবে সুস্থ থাকে তাহলে অবশ্যই নিয়মিত মেডিটেশন করতে হবে।
সুস্থ যৌন জীবন:
সুস্থ যৌন জীবন একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষকে ফিট রাখতে সাহায্য করে। আজকালকার বাস্তব জীবনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকে। যার ফলে যৌন জীবন ব্যাঘাত ঘটে। সুস্থ যৌন জীবনের জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। যেমন, তরমুজ, বেদেনা, দুধ, ডিম,মধু ইত্যাদি। এসব খাবার খেলে যৌন জীবন ঠিক থাকার পাশাপাশি শরীরও ঠিক থাকে। নিয়মিত যৌন মিলনের ফলে শরীর থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। যার ফলে আমাদের শরীর ফিট থাকে।
নিয়মিত শারীরিক চেকআপ করা:
আমরা শারীরিক সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত শারীরিক চেকআপ করতে হবে। আমাদের শরীর বাইরে থেকে ভালো থাকলেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে। সেটা আমরা নিজেরা বুঝতে পারি না। ভিতরে সমস্যা দিন দিন বেড়ে যায়। যার কারণে হঠাৎ করে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ কারণে, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।
নিয়মিত চেকআপ করার ফলে আমাদের শরীরের কি কি সমস্যা রয়েছে বোঝা যায়। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের দূষিত পদার্থ আছে কিনা এবং শরীরের সকল অঙ্গ ঠিক আছে কিনা জানা যায়। কোন ধরনের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ চিকিৎসা নিলে সহজে সমাধান করা সম্ভব। বডি ফিটনেস ঠিক রাখতে নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।
শারীরিক ওজন বজায় রাখা:
বডি ফিটনেস ঠিক বলতে বোঝানো হয় সুস্থ থাকা। সুস্থ থাকতে হলে শারীরিক ওজন ঠিক থাকতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষের উচ্চতা অনুযায়ী শারীরিক ওজন রয়েছে। শারীরিক উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি হলে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। ওজন বেশি হলে শরীরে চর্বি জমা হয়। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে। এ কারণে ফির থাকতে হলে ওজন ঠিক রাখতে হবে। ওজন ঠিক রাখতে শাকসবজি খেতে হবে এবং বাহিরের খাওয়া বাদ দিতে হবে। সব সময় বাসার খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে পরিমাণ মতো।
রাত্রে ভালো ঘুম: বডি ফিটনেস ঠিক রাখার উপায়
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। সারাদিন কাজ করার পর আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমরা যদি ঘুমাই তাহলে আমাদের শরীরের নতুন কোষ তৈরি হয়। নতুন কোষ আমাদের শক্তির যোগান দেয়। নিয়মিত ঘুমানোর ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা এবং ক্লান্তি দূর হয়। ব্রেন সতেজ থাকে।
দিনের ঘুমের থেকে রাতের ঘুম খুব কার্যকরী। কারণ রাতের সময় কোন ধরনের শব্দ থাকে না এবং পরিবেশ ঠান্ডা থাকে। যার ফলে পরিপূর্ণ ঘুম হয়। এ কারণে রাত্রে ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর ফলে আমাদের সকল অঙ্গ সুস্থ থাকে। বডি ফিটনেস ঠিক রাখার উপায় হচ্ছে নিয়মিত ঘুমানো।
তামাক জাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকা:
সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে হলে তামাক জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে। তামাক জাতীয় দ্রব্য বলতে, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গোল এসব কে বোঝানো হয়। এ জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়। যেমন, সিগারেট বিড়ি খাওয়ার ফলে ফুসফুসে সমস্যা হয়। অতিরিক্ত সেবনের ফলে ক্যান্সার হয়। জর্দা ও গুল খেলে মুখে ক্যান্সার হয়। এ কারণে এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। এসব খাবার খেয়ে কখনো শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায় না।
বাইরের খাবার পরিহার করা:
বাইরের খাবার খেলে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যা হয়। কারণ, ওসব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। অনেক সময় বাসি খাবার দিয়ে থাকে। বাইরের খাবারে অনেক ধরনের ভেজাল থাকে। পর্যাপ্ত তেল থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। বাইরের খাবার খেলে অনেক সময় পেটের সমস্যা হয়। পেটের সমস্যা সমস্যার জন্য শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব কারণে সবসময় বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সব সময় বাসার খাবার খেতে হবে। তাহলে সুস্থ থাকা সম্ভব। আর সুস্থ থাকলেই আমরা শারীরিকভাবে ফিট থাকব।
মাঝে মাঝে আড্ডা দেওয়া:
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতে হয়। বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা দেওয়ার ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়। মনের মধ্যে আবেগ প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়া যায়। মনের কষ্ট প্রকাশ করার ফলে হার্টের সমস্যা দূর হয়। এ কারণে মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতে হয়। আড্ডা দিলে মন ভালো থাকে। মন ভালো থাকলে আমাদের শরীর ভালো থাকে।
শেষ কথা:
বডি ফিটনেস ঠিক রাখার উপায় সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই সকল কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে বয়স হলেও কোন ধরনের রোগ আক্রমণ করতে পারে না।
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে সঠিকভাবে চলাফেরা করতে হবে। তাহলেই সুস্থ থাকা সম্ভব। লেখার মধ্যে ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাতে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 Comments