বাংলাদেশের জনসংখ্যা তুলনায় কর্মসংস্থান অনেক কম। সে কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেকারত্ব বেশি। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষ বেকারত্ব দূর করতে বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে। সেখান কাজ করে নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করছে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজস্ব খাদের সবচেয়ে বড় উৎস রেমিটেন্স। এই রেমিটেন্স পাঠায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে। কোন সময় সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে সৌদি আরব। অনেকেই জানতে চাই, সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি /সৌদি আরব ভিসার দাম কত?
শ্রমিকেরা বিদেশে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। যার ফলে বিশেষ সকল দেশ বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহী দেখায়। তবে বিশেষ করে সৌদি আরব বাংলাদেশের মানুষ বেশি কাজ করে। কারণ বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র এবং সৌদি আরব মুসলিম রাষ্ট্র।
তাই সেখানকার নিয়ম কানুন সকলের কাছে ভালো লাগে। চলুন জেনে নেই, সৌদি আরব কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং সৌদি আরব ভিসার দাম কত সে সম্পর্কে।
মানুষ কেন সৌদি আরব যেতে চায় :
বাংলাদেশ থেকে মানুষ সৌদি আরব দুটি কারণে যায়। বিশেষ করে সৌদি আরব মানুষ যেতে চায় হজ্জ করতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমগণ সৌদি আরব আছে পবিত্র হজ্জ পালন করতে। ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থল সৌদি আরব।
এ কারণে অনেকের জীবনের ইচ্ছা থাকে জীবনে একবার হল সৌদি আরব ঘুরে আসার। সৌদি আরবের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান হচ্ছে মক্কা ও মদিনা। যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বসবাস করেছেন।
বর্তমান সময়ের মানুষ সৌদি আরব যাচ্ছে কাজের সন্ধানে। কারণ সৌদি আরবের বর্তমান সময়ে প্রচুর কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। এছাড়া প্রচুর পরিচ্ছন্ন কর্মীর প্রয়োজন পড়ে। এবং বাংলাদেশের টাকার তুলনায় সৌদি আরবের টাকার মূল্য বেশি।
এসব কারনে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ সৌদি আরব যাচ্ছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে মেয়ে মানুষ সৌদি আরব যাচ্ছে। মেয়েরা বিশেষ করে যায় বাসাবাড়ির কাজের জন্য।
সৌদি আরব কি কাজের জন্য উপযুক্ত:
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার লোক সৌদি আরব কাজের করতে যাচ্ছে। বর্তমানে সৌদি আরবে অনেক ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকেরা অনেক সুনাম অর্জন করেছে। যার ফলে অনেক কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চলুন জেনে নেই, সৌদি আরব কি কাজের জন্য উপযুক্ত।
- কন্ট্রাকশনের কাজ।
- হোটেলে এর কাজ।
- রাস্তা পরিষ্কারের কাজ।
- মেয়েদের বাসা বাড়ির কাজ।
- গাড়ি চালানো কাজ।
- খেজুর বাগান দেখাশোনার কাজ।
- উটের খাবারের কাজ।
- মসজিদ পরিচ্ছন্ন কর্মী।
ওপরে যেসব কাজ উল্লেখ করা হলো এসব কাজই করতে হয়। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের কাজের জায়গা সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণত উপরে কাজগুলোই করতে মানুষ সৌদি আরব যায়।
সৌদি আরবের প্রবাসী নারীরা কি কাজ করতে পারবে:
বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক আধুনিক হয়েছে। যার ফলে তারা সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে। সংসারের দায়িত্ব পরিচালনা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু সেই টাকা বাংলাদেশে আয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাই বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাচ্ছে। বর্তমানে সৌদি আরবে মেয়েদের অনেক কাজের ব্যবস্থা রয়েছে। যার জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার নারী সৌদি আরব যাচ্ছে।
বিশেষ করে সৌদি আরবে নারীরা বাসার কাজে যায়। সৌদি আরবের মানুষ আরাম প্রিয়। তারা কোন কাজ করে না। কারণে, বাসার কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে নারীরা যায়। সৌদি আরব ছাড়াও অন্যান্য দেশে এসব কাজ করতে নারীরা যাচ্ছে। বর্তমানে নারীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সৌদি আরবের বেসিক বেতন কত?
বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থান অনেক কম। যার ফলে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেকারত্ব দূর করার জন্য মানুষ প্রবাসে পাড়ি জমাচ্ছে। প্রবাসে কাজ করার ফলে পারিবারিক সচ্ছলতা ফিরে আসছে। এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ মানুষ সৌদি আরবে কাজ করে। আমাদের অনেকের অনেক কৌতুহল থাকে, সৌদি আরবের বেসিক বেতন কত?
বর্তমান সময়ে সৌদি আরবে শ্রমিকের বেসিক বেতন ১০০০ রিয়াল। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানিতে ভিন্ন ভিন্ন ভিন্ন ভিন্ন বেতন স্কেল রয়েছে। এছাড়াও খাবারের টাকা পাই। এবং ওভার টাইম করলে আলাদা টাকা পায়। এ কারণে, সৌদি আরব প্রবাসীদের সঠিক বেসিক বেতন বলা সম্ভব না।
সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরি কোনটি:
বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ সৌদি আরবে কাজ করছে। কারণ, সৌদি আরবে অনেক কাজের জায়গা রয়েছে। কিন্তু সকল কাজের বেতন এক না। কাজ ধরণের উপর কাজের বেতন নির্ভর করে। বিশেষ করে যে কাজে যত পরিশ্রম সে কাজে ততো বেতন।
সৌদি আরবের সবচেয়ে কাজের বেতন বেশি কন্টাকশনের কাজে। কারণেই কাজে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রমের পাশাপাশি ওভারটাইম করার সুযোগ রয়েছে। যার ফলে এই কাজে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া যায়।
এছাড়াও অন্যান্য কাজের বেতন তুলনামূলক ঠিক রয়েছে। বর্তমান সময়ে সৌদি আরবের অনেক বিল্ডিং এর কাজ চলছে। যার জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। শ্রমিক ঘাটতি পূরণ করছে বাংলাদেশের মানুষের। বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের মানুষ কাজ করে। বিল্ডিং বা কন্ডাকশনের কাজের বেতন সকল কাজের তুলনায় বেশি।
মূল বেতন মাসিক নাকি বার্ষিক:
আমরা কাজ করে থাকি, টাকার জন্য। কারণ, টাকা ছাড়া এই সমাজে কেউ মূল্য দেয় না। তাই সকল মানুষের একটাই লক্ষ্য টাকা উপার্জন করা। বর্তমান সময়ের মানুষ টাকা উপার্জনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। যাতে করে ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর হবে কাটাতে পারে।
বর্তমানে বিদেশ যাওয়ার আগে জানতে চাই বেতন সম্পর্কে। কারণ, সঠিক পরিমাণ বেতন না পেলে সেখানে গিয়ে সমস্যা হয় পড়তে হবে।
এছাড়াও অনেকে জানতে চাই মূল বেতন মাসিক না বার্ষিক।
বিশেষ করে বেতন মাসিকভাবেই দিয়ে থাকে। প্রতিমাসের বেতন প্রতি মাসেই। কিন্তু কিছু কিছু সময় কোম্পানির সমস্যার কারণে এক মাসের বেতন অন্য মাসে দিয়ে থাকে। বেতন মাসিক না বার্ষিক সেটা বিদেশ যাওয়ার আগে কোম্পানি জানিয়ে রাখে। বেশিরভাগ কোম্পানির বেতন মাসিক হয়ে থাকে।
সৌদি আরবে বছরে কত দিন অসুস্থতার ছুটি থাকে:
সৌদি আরবে কাজ করলে অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকে। কারণ, সৌদি আরব সম্পূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র। এ কারণে নামাজের জন্য সুযোগ পাওয়া যায়। এবং প্রতি শুক্রবার ছুটি থাকে। এছাড়া বিশেষ দিনগুলোতে ছুটি থাকে। কিন্তু ছুটি কম বেশি হয়ে থাকে কাদের ধরণের উপর। কারণ, যারা বিল্ডিং এর কাজ করে তাদের ছুটির পরিমাণ কম থাকে।
অনেকে জানতে চাই অসুস্থ হলে ছুটি পাওয়া যায় কিনা। প্রতিটি কোম্পানি আপনি অসুস্থ হলে ছুটি দিতে বাধ্য। কারণ অসুস্থ অবস্থায় কাজ করা অসম্ভব। অনেকদিন যাবত অসুস্থ থাকলে বেতন বন্ধ থাকে। কারণ কোম্পানি কাজের বিনিময়ে টাকা দিয়ে থাকে। যদি কাজ করতে না পারেন বেতন পাবেন না। তবে হঠাৎ করে অসুস্থ হলে ছুটি পাবেন।
বিজনেস ভিসায় কি সৌদি আরবে কাজ করা যায়:
সৌদি আরবে মানুষ বিভিন্ন ভিসায় যায়। বিভিন্ন জন বিভিন্ন কারণে সৌদি আরব যায়। বিশেষ করে কাজের জন্য এবং হজ্জ পালনের জন্য মানুষ সৌদি আরবে যায়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় এক লক্ষ মানুষ হজ্জ পালন করতে সৌদি আরব যায়।
এছাড়াও টুরিস্ট ভিসায় মানুষ সৌদি আরব ঘুরতে যায়। অনেকের মনে প্রশ্ন, বিজনেস ভিসায় কি সৌদি আরবে কাজ করা যায় কিনা। এখন পর্যন্ত সৌদি আরব সরকার ওই দেশে বিজনেস করার মত তেমন সুবিধা প্রদান করেনি। অনেকে ফ্রি ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে।
যদি সেখানে বিজনেস ভিসায় যেতে চান তাহলে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানতে হবে। ওই দেশের সরকার যদি আপনাকে বিজনেস করার সুযোগ দেয় তাহলে আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। কিন্তু সাধারণভাবে বিজনেস ভিসায় গিয়ে কাজ করতে পারবেন না।
সৌদি আরব ভিসা দাম কত?
বর্তমানে মানুষ খুব সহজেই সৌদি আরব যেতে পারছে। কারণ সৌদি আরবের ভিসা সব সময় পাওয়া যায়। তবে ভিসার প্রকারভেদ রয়েছে। কারণ, প্রতিটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন কারণে সৌদি আরব গিয়ে থাকে। বিশেষ করে মানুষ সৌদি আরব যায় হজ্জ করতে এবং কাজ করতে।
দুই ধরনের কাজ হওয়ার ফলে ভিসার দামও দুই ধরনের হয়ে থাকে। কারণ মানুষ হজ করতে চাই কয়েকদিনের জন্য। আর মানুষ কাজ করতে যায় কয়েক বছরের জন্য।
সাধারণত হজ করতে গেলে হজের ভিসার দাম ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিছু কিছু সময় টাকা কম বেশি হয়ে থাকে। এবং আপনি যদি দূর থেকে তিন বছরের জন্য কাজ করতে যান তাহলে আপনাকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা দিতে হবে ভিসার জন্য। সঠিকভাবে ভিসার দাম বলা অসম্ভব।
কারণ যে দেশে যাবেন সে দেশে সরকার ভিসার দাম কম বেশি করতে পারে। তাই সঠিক করে ভিসার দাম বলা যায় না।
শেষ কথা: সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি / সৌদি আরব ভিসা দাম কত?
বাংলাদেশের বেকারত্বের হার দূর করতে বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় কর্মখাত অনেক কম। তাই বাংলাদেশ বেকারত্বের হার অনেক বেশি। বর্তমানে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। যার ফলে মানুষ কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছে যাচ্ছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করে। কারণ, বাংলাদেশের ৯৯% মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আর ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থল সৌদি আরব। এই কারণে সবাই সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করে।
এতে করে সবকিছু ঘুরে দেখাও হয় এবং অর্থ উপার্জন করা যায়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ